সংবাদ

ডুয়েটে ‘আইসিএমএমপিই’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সম্পন্ন

ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), গাজীপুর-এ ‘মেকানিক্যাল, ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড প্রোসেস ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিএমএমপিই-২০২৪)’ শীর্ষক তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এ কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক।

এ সময় তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সমৃদ্ধি আর নানা অর্জনের মধ্য দিয়ে গাজীপুরের ভাওয়াল ভূমিতে অবস্থিত ডুয়েট গৌরব আর সাফল্যে দেশের অন্যতম একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশ গঠনের যে দর্শন দিয়ে গেছেন, আপনারা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ ও দর্শনকে প্রতিটি কর্মে প্রতিফলিত করে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ড দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মনে রাখবেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন আমাদের প্রতিটি কর্মে প্রতিফলিত হলে আমরা এগিয়ে যাবোই, কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, গভীর সমুদ্র বন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্প, আইসিটি খাতের উন্নয়ন, তেল, গ্যাস, কয়লা, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণসহ এ ধরনের আরো অনেক কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের দেশ ধান উৎপাদন, মৎস্য, সবজিসহ নানা ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর কাতারে পৌঁছেছে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে গবেষণার ফলেই এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান উন্নয়নের মাধ্যমে একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, চতুর্থ শিল্প বিল্পবের প্রাক্কালে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে গবেষণা ও উদ্ভাবন এবং জ্ঞানের আদান-প্রদানের জন্য এই ধরনের আন্তর্জাতিক কনফারেন্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যা চতুর্থ শিল্প বিল্পবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে আরো দক্ষ হয়ে উঠতে সহায়তা করবে। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হচ্ছে, এর সঙ্গে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি কনফারেন্সটি সফল করার জন্য ভাইস চ্যান্সেলর, আয়োজক কমিটি, যন্ত্রকৌশল অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবকসহ সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এছাড়া তিনি এই কনফারেন্স থেকে মেকানিক্যাল, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ক উদ্ভাবনী ধারণা এবং জ্ঞানের আদান-প্রদানের মাধ্যমে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশ গঠনে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কনফারেন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. হাবিবুর রহমান বলেন, আজ আমরা যখন যন্ত্রকৌশল, উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকৌশলে অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করছি, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদৃষ্টি ও অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সমৃদ্ধ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের, যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাতীয় উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করবে। তার স্বপ্ন আমাদের জাতিকে উদ্ভাবন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও গবেষণার ক্ষেত্রে অসংখ্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে, যা আমাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার যাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেন, যন্ত্রকৌশল, উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রকৌশল শিল্প উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম, ইন্টারনেট অফ থিংস এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি প্রধান ভূমিকা পালন করছে। এর ধারাবাহিকতায় আমরা থ্রিডি প্রিন্টিং, স্মার্ট টেক্সটাইল, সবুজ রসায়ন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতির মতো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিগুলো প্রত্যক্ষ করছি। আমার বিশ্বাস, এই সম্মেলনটি এই ধরনের জটিল প্রকৌশল বিষয়ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ও আমাদের মাতৃভূমির জন্য টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে এবং জ্ঞানের আদান-প্রদান ও সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। আমি ডুয়েটের যন্ত্রকৌশল অনুষদকে শিক্ষার এবং গবেষণার ক্ষেত্রে তাদের নিরলস প্রচেষ্টা ও কনফারেন্সটি সফল করার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্মার্ট ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নতুন নতুন গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য শিক্ষক, গবেষক, উদ্ভাবক ও শিল্প উদ্যোক্তাসহ সকলকে উপাচার্য একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও তাদের পরিবারের শাহাদাত বরণকারী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাসহ জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সকল শহিদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।

যন্ত্রকৌশল অনুষদের ডিন ও কনফারেন্স চেয়ার অধ্যাপক ড. মো. আরেফিন কাওসারের সভাপতিত্বে মঞ্চে আরো উপস্থিত ছিলেন যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও কনফারেন্সের অরগানাইজিং কমিটির চেয়ার অধ্যাপক ড. হিমাংশু ভৌমিক ও কনফারেন্সের টেকনিক্যাল চেয়ার ও পরিচালক (গবেষণা ও সম্প্রসারণ) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে প্রসিডিং পাবলিকেশন কমিটির চেয়ার ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. খালেদ খলিল, এডিটর ইন চিফ ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এ.এন.এম. মমিনুল ইসলাম মুকুট, কনফারেন্স সেক্রেটারি ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহযোগী সেক্রেটারি ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ মিয়াকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সুষ্ঠুভাবে কনফারেন্সটি সফল করার জন্য অনুষ্ঠানের সভাপতি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

উল্লেখ্য, তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বিভিন্ন বিষয়ে মোট ৯৮ টির অধিক টেকনিক্যাল পেপার, কী নোট বক্তৃতা, ইন্ডাস্ট্রি-অ্যাকাডেমিক কোলাবোরেশন ইত্যাদি উপস্থাপিত হয় এবং এর মধ্য থেকে বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, পরিচালক এবং শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাসহ দেশবিদেশের শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ অংশগ্রহণ করেন।

Related Articles

Back to top button